একসময় ছিলো সাদিকার গোছানো একটি পরিবার। বাবা কাঠমিস্ত্রি ও কৃষিকাজ করতেন, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের মাহমুদপুর গ্রামে ছিল নিজেদের জমিজমা আর সুখী সংসার। কিন্তু ২০১৫ সালে বাবার স্ট্রোকের পর যেন সব ওলট-পালট হয়ে গেল। সংসারের হাল ধরতে, নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ঢাকায় আসেন সাদিকা, সঙ্গে ছোট বোন ও বাবা। শুরু হয় গার্মেন্টসে কর্মজীবন—চরম কষ্ট, অপমান আর ক্লান্তির এক কঠিন অধ্যায়।
তিন মাস গার্মেন্টসে কাজ করার মধ্যেই চোখে পড়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ)-এর বৃত্তির সুযোগ। প্রথমে গার্মেন্টসের অন্যান্যদের তিরস্কারের মুখে পড়লেও দমে যাননি তিনি। ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্রুত কোর্স শেষ করে শুরু করেন স্নাতকের পড়াশোনা। প্রথম বর্ষেই তার গবেষণা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। নিজ উদ্যোগে ইংরেজি দক্ষতা বাড়াতে ক্লাব তৈরি করেন, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন।
২০২০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন ‘ভ্যালিডিক্টোরিয়ান’ হিসেবে। এরপর ২০২১ সালে ইউনিসেফে, এবং পরে আইপিডিসিতে চাকরি পান। এখন তিনি কাজ করছেন আইপিডিসির নারী প্ল্যাটফর্ম ‘আইপিডিসি প্রীতি’র প্রোডাক্ট ও মার্কেটিং বিভাগে।
তার কাহিনি শুধু নিজের নয়—হাজারো নারীর সাহস, সংকল্প আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। আর সবচেয়ে বড় কথা, বাবার সেই কথাটি সত্য প্রমাণ হয়েছে—”সাদিকা চাকরি করলে আমি সুস্থ হবো।” বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে; যদিও এখন তিনি নেই, কিন্তু রেখে গেছেন গর্বের একটি অধ্যায়।