মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন নিঃশব্দে এই অঙ্গটি রক্ত বিশুদ্ধ করা, বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার মতো কাজ করে। কিন্তু সমস্যাটা হলো— কিডনির অসুস্থতা প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে ধরা পড়ে না। একটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্যটি কাজ চালিয়ে যেতে পারে, ফলে অনেকেই বুঝতে পারেন না কখন পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসকদের মতে, কিডনি খারাপ হওয়ার আগে শরীর কিছু সতর্ক সংকেত দেয়, যা সবচেয়ে আগে চোখে ধরা পড়ে। চোখ একটি সংবেদনশীল অঙ্গ, তাই দেহের ভেতরে টক্সিন জমা, পানি ও খনিজের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া কিংবা রক্তচাপের পরিবর্তন সবচেয়ে দ্রুত চোখে প্রভাব ফেলে। আসুন জেনে নিই, কিডনি সমস্যার আগে চোখ কোন ৫টি লক্ষণ দেখাতে পারে—
১. ঝাপসা বা দ্বিগুণ দেখা
হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া বা দ্বিগুণ দেখা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসজনিত রেটিনার ক্ষতির কারণে হতে পারে। এগুলো কিডনি রোগের বড় ঝুঁকির কারণ। এমন হলে চোখের পাশাপাশি কিডনিরও পরীক্ষা জরুরি।
২. চোখ শুষ্ক, চুলকানো বা জ্বালা
পরিবেশগত কারণ ছাড়া যদি চোখ সবসময় শুষ্ক থাকে, লাল হয় বা জ্বালা করে, তবে কিডনি সমস্যার কারণে শরীরে টক্সিন জমা বা খনিজের ভারসাম্যহীনতা থাকতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের মাঝে বেশি দেখা যায়।
৩. সারা দিন চোখ ফোলা
ঘুম থেকে ওঠার পর ফোলা স্বাভাবিক হলেও যদি চোখ সারাদিন ফোলা থাকে, তা প্রোটিনুরিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এতে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বেরিয়ে যায় এবং চোখের চারপাশে তরল জমে ফোলাভাব তৈরি হয়, যা কিডনি ক্ষতির প্রাথমিক সতর্কতা।
৪. রঙ চিনতে সমস্যা হওয়া
কিডনি অসুস্থ হলে নীল ও হলুদ রঙ আলাদা করতে সমস্যা হতে পারে। এর কারণ হলো রেটিনা বা অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে চোখে ধরা দেয়, তবে অবহেলা করলে তা গুরুতর হতে পারে।
৫. চোখ লাল বা রক্তাভ হওয়া
অ্যালার্জি বা ক্লান্তির কারণে চোখ লাল হতে পারে, তবে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের কারণে চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালি ফেটে গিয়েও এমন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে লুপাস নেফ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন রোগও কিডনি ও চোখ উভয়কে প্রদাহগ্রস্ত করে।
সতর্কতা
যদি চোখের সমস্যা দীর্ঘদিন থাকে, সঙ্গে শরীর ফোলা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা প্রস্রাবে পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে অবহেলা না করে চোখ ও কিডনি— দুই জায়গারই পরীক্ষা করান।