স্তন্যপায়ী প্রাণী না হয়েও দুধ দেয় কবুতর—এ তথ্য শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন। সাধারণত গরু, ছাগল, উট বা ঘোড়ার মতো স্তন্যপায়ী প্রাণীরাই দুধ দেয়, কিন্তু কবুতর একটি ব্যতিক্রম। ডিম পাড়ার পাশাপাশি বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য বিশেষ ধরনের দুধ উৎপাদন করে তারা। তবে এই দুধ স্তনবৃন্ত থেকে নয়; এটি তৈরি হয় কবুতরের খাদ্যনালির নিচের অংশে থাকা একটি বিশেষ থলি বা ‘ক্রপ’ থেকে। এই প্রক্রিয়ায় ‘প্রোল্যাকটিন’ (Prolactin) নামের হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিমে তা দিতে বসার প্রায় অষ্টম দিন থেকে এই দুধ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয় এবং ডিম ফোটার পর প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত বাচ্চারা এটি খায়।
এ দুধ সাধারণ দুধের মতো তরল নয়; বরং কিছুটা ঘন, হলদেটে এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যা বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। মা ও বাবা—উভয় কবুতরই মুখ দিয়ে এই দুধ বাচ্চাদের খাওয়ায়। একে বলা হয় ‘পিজিয়ন মিল্ক’ বা ‘ক্রপ মিল্ক’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামানের মতে, কবুতরের খাদ্য থলিতে শস্য দানা ও গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত সাদা তরলের মিশ্রণে এই দুধ তৈরি হয়, যা বাচ্চাদের জন্য সহজে হজমযোগ্য করে তোলা হয়।
শুধু কবুতর নয়, আরও কিছু পাখি যেমন—পেঙ্গুইন ও ফ্লেমিঙ্গোও ক্রপ মিল্ক তৈরি করে। পেঙ্গুইনের ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ পাখিরাই এই দুধ উৎপাদন করে, আর ফ্লেমিঙ্গোর ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই এটি তৈরি করে। এছাড়া হাঁসসহ আরও কিছু পাখির মধ্যেও ফসলের দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের ছানাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।