সমাজ গঠিত হয় অনেক মানুষের সমন্বয়ে। সমাজে ভালো-মন্দ উভয় ধরণের মানুষই বাস করে। এমনকি একজন ভালো মানুষের মধ্যেও কিছু খারাপ অভ্যাস থাকতে পারে এবং একজন খারাপ মানুষের মধ্যেও কিছু ভালো গুণ দেখা যেতে পারে। ইসলাম এসেছে এই বৈপরীত্যকে দূর করে মানুষের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করতে। ইসলাম খারাপ মানুষকে ভালোতে রূপান্তর করেছে এবং ভালো মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা খারাপ দিকগুলোকেও সংশোধন করেছে। সমাজের প্রতিটি সদস্য যখন এই চেতনায় জীবন গড়তে সচেষ্ট হবে, তখন সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
একটি সমাজের চরিত্র বিচার করা যায় সেখানকার মানুষের আচরণ, লেনদেন, সততা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে। যখন সমাজের মানুষের চরিত্রে অবনতি ঘটে, তখন সমাজের প্রতিটি স্তরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইসলাম এই চারিত্রিক অবক্ষয় রোধ করে মানুষকে উন্নত চরিত্রে গুণান্বিত হতে নির্দেশ দেয়।
সুন্দর আচার-আচরণ ও উত্তম গুণাবলি মানুষকে করে তোলে পরিপূর্ণ। এমন আচরণ শুধু পার্থিব জীবনেই নয়, বরং পরকালের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। নবী করিম (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা পর্যন্তও সওয়াবের কাজ। উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা ছিল তাঁর অন্যতম নবুয়তের উদ্দেশ্য। তিনি কখনো কাউকে কটু কথা বলতেন না; তাঁর চরিত্র ছিল বাস্তব কোরআনের প্রতিচ্ছবি।
উন্নত চরিত্র গঠনে রাসুল (সা.)-এর জীবন ছিল সর্বোচ্চ আদর্শ। তাঁর আচার-আচরণ ছিল অত্যন্ত নম্র ও মধুর। সাহাবায়ে কেরাম তাঁর কাছ থেকে এ শিক্ষাই গ্রহণ করেছিলেন এবং তা পরবর্তীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হাদিস শরিফে উত্তম চরিত্রের বহু ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি কেয়ামতের দিন নবীজির সবচেয়ে কাছে থাকবে। অন্যদিকে, বাচাল, অশ্লীল ভাষাব্যবহারকারী ও অহংকারী ব্যক্তি থাকবে তাঁর থেকে দূরে।
একজন উত্তম চরিত্রের মানুষ ইবাদতকারী ও রোজাদারের মর্যাদা অর্জন করতে পারে, এমনকি তার ইমানও হয় পরিপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, যিনি সর্বোচ্চ উত্তম আচরণে গুণান্বিত, তিনিই সবচেয়ে পরিপূর্ণ মুমিন। উত্তম আখলাক মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায়। আল্লাহভীতি ও উত্তম আচরণ—এই দুটি গুণই মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম।
অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে প্রয়োজন নিজের চরিত্র সংশোধনের পাশাপাশি অন্যদেরও ভালো পথে চলার অনুপ্রেরণা দেওয়া। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা আমাদের সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝে নেওয়ার এবং তা জীবনে বাস্তবায়নের তওফিক দিন।