আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে রবিবার (২৭ এপ্রিল) ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার শিশু ও কিশোরদের জন্য ‘নৃত্য প্রভাকর গওহর জামিল কর্মশালা’র আয়োজন করে নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ডিএমভি। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নৃত্য ঐতিহ্য এবং কিংবদন্তি নৃত্যগুরু গওহর জামিলের অবদান তুলে ধরার লক্ষ্যে ছিল এই ব্যতিক্রমী আয়োজন।
বাংলা স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিশ্বের সকল নৃত্যশিল্পীর মিলিত নৃত্যছন্দ ও নূপুর নিক্কনের দৃপ্ত আলোড়ন সৃষ্টিকরা প্রত্যয়ের ধ্বনি বিশ্বময় ছড়িয়ে মঙ্গল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন গড়ে তুলবে—আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে এ আমার একান্ত প্রত্যাশা।” কর্মশালার প্রথম পর্বে তিনি গওহর জামিলের নৃত্যদর্শন ও তাত্ত্বিক অবদান নিয়ে একটি অনুপ্রেরণামূলক ক্লাস পরিচালনা করেন।
কর্মশালার দ্বিতীয় অংশে গওহর জামিলের কোরিওগ্রাফির ওপর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রোজমেরী মিতু রিবেইরো, যিনি শৈশবে গওহর জামিলের সরাসরি শিক্ষার্থী ছিলেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এটা আমার জন্য এক আশীর্বাদ যে আমি নৃত্যের হাতেখড়ি পেয়েছি গওহর জামিল স্যারের কাছে। তাঁর শেখানো শিল্পচর্চা আজও আমাকে পথ দেখায়।”
গওহর জামিল বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পের একজন পথিকৃৎ ও নবধারার প্রবর্তক ছিলেন। লোকনৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ও সমসাময়িক ধারার সমন্বয়ে তিনি একটি স্বতন্ত্র নৃত্যভঙ্গির জন্ম দেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘নৃত্যাঞ্চল’ সংস্থার মাধ্যমে তিনি নৃত্যকে বিনোদনের গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আজও তাঁর ভাবনা ও কর্ম বাংলাদেশের নৃত্যাঙ্গনে প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
রবিবারের কর্মশালায় যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা প্রায় ২৫ জন শিশু ও কিশোর অংশ নেয়। দিনশেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয় এবং আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উপলক্ষে কেক কেটে আনন্দ উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ক্রিস্টিন রোজারিওর আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে।
‘নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন, ডিএমভি’ ২০২৪ সালে যাত্রা শুরু করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর ডিসি মেট্রো এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পীদের একটি মিলনমঞ্চ। প্রবাসে নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের এটি চতুর্থ শাখা, অন্য তিনটি রয়েছে ইংল্যান্ড, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। সংগঠনটি নৃত্যশিল্পের মানোন্নয়ন, গবেষণা ও প্রজন্মান্তরে নৃত্যসংস্কৃতির উত্তরাধিকার সংরক্ষণের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।